সাংবাদিকতা এক মহান পেশা।মানুষকে জাগ্রত করার একমাত্র প্রদীপ ঘর,ন্যায়কে ন্যায়,অন্যায় কে অন্যায় বলার অদম্য সাহসের অপর নাম সাংবাদিকতা। তবে বর্তমানে ঢালা কুলা সাজিয়ে বিভিন্ন ভাবে সুবিদা আদায় করা,কার্ড নির্ভর নিজের স্বার্থে সুবিদা গ্রহন এবং সংবাদ গ্রহন বা প্রেরণ বা ঝড়ের অনুকূলে বা প্রতিকূলে সুবিধামত অষ্টশিক ধরার নাম কখনও প্রকৃত সাংবাদিকতা হতে পারে না।
না জেনে,না বুঝে এখন অনেকে এই পেশায় এসে নিজকে সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে বা যে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জ্ঞান থাকা দরকার তা আছে কিনা তা নিয়ে ও বিজ্ঞ মহলে প্রশ্ন বয়েছে। সাংবাদিক তারাই যারা ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়,বিভিন্ন সমস্যা জেনেও দূর্ভোগ জেনে ও বিন্দুমাত্র যারা হতাশ না হয়ে,প্রতিকুল অবস্হাতে নিজকে মানিয়ে নেয়।এই দেশে কেউ কেউ মানবতার দোহাই দিয়ে বা সাংবাদিক পরিচয়ে আমানবিক, অসাংবাদিক সুলভ কর্মযজ্ঞ যে করে না তা কিন্তু নয়।
না জেনে না বুঝে বিভিন্ন নামে নতুন নতুন যে সাংবাদিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ তা শোভনীয় নয়।নামে বা নাম সর্বস্হ যে সব সংগঠন রয়েছে তারা স্বাধীনতা,পরবর্তী সময় হতে আজ পর্যন্ত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারেনি।
কারন সাংবাদিকতার পাশাপাশি চলে অপসাংবাদিক- তা এবং সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সুকৌশলে চলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অন্যদিকে সাংবাদিকদের নায্য চাওয়া পাওয়া বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।সরকার আসে সরকার যায় সাংবাদিকদের একটা অংশের আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের কারনে পুরো সাংবাদিক সমাজ তাদের চাওয়া,পাওয়া থেকে দুরে সরে যায়। তবে অতি উৎসাহীদের অজ্ঞতা,প্রকৃত শিক্ষার অভাব,বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড সঠিক বিষয়ে সঠিক ধারনা না থাকা জ্ঞান চর্চা না করা,প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি স্বার্থের বেড়াজালে সত্যের উপর অবজ্ঞা,অবহেলা, সাংবাদিক হিসাবে অহমিকা,অন্যায় পথে নিজের খ্যাতি পাওয়া ও টাকা আয় করার অদম্য প্রচেষ্টার কারনে এই বিভাগ দেশের অন্যান্য বিভাগের মত আজ প্রশ্নবানে জর্জরিত।সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য ও সাংবাদিক হত্যাকান্ড নির্যাতন,নিপীড়ন সহ নানা ধরনের অনিয়ম,স্বার্থের কারনে সাংবাদিকরা তাদের নায্য দাবী আদায়ে বরাবরই ব্যর্থ।রাষ্ট্রের সংবিধানে যেখানে সংগঠন করার অধিকার সকলের রয়েছে সেখানে যে কেউ সংগঠন করতে পারে তবে কোন সংগঠন সাংবাদিক কল্যানে তেমন কোন ভুমিকা রাখতে আজ ও পারেনি বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের যদি মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, মানবকল্যান যদি অর্থের বলয়ে ঘুরপাক খায় তখন সাংবাদিক, সাংবাদিকতা মানব কল্যানে নয়, নিজ কল্যানে ভুমিকা রাখে যা স্বাভাবিক।তাহাছাড়া সংবাদ পরিবেশন সহ যাবতীয় কর্মযজ্ঞ যদি জনমানুষের কল্যানে না হয় তখন তা হয় দুঃখজনক।এর জন্য দায়ী কিছু উৎসাহী অনেকের মতে বিজ্ঞ,নির্লজ্জ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা।
মুলত Journalist বা সাংবাদিক তারাই এক কথায় যারা দেশ কিংবা দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদ, বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ পূর্বক সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন রচনা করেন সংবাদমাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে যারা প্রেরণ করেন। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ কিংবা নারী যে কোন সময় সাংবাদিকতাকে অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসাবে গ্রহন করতে পারেন।তাহাছাড়া যারা বিভিন্ন মাধ্যমে লিখেন তারা ও এক ধরনের সাংবাদিক বা গনমাধ্যম কর্মী এবং তারা তাদের গবেষণালব্ধ তথ্য, লেখনী এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিবেদন রচনা করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেন। যা সংবাদপত্র,টেলিভিশন,রেডিও, ডিজিটাল মাধ্যমরূপে বিভিন্ন অনলাইনে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে তারা নিরপেক্ষভাবে প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করেন।মুলত মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া প্রতিটি সংবাদ,প্রতিবেদন পরিবেশন,যা সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
সাংবাদিকতার কতগুলো নিয়ম কানুন রয়েছে তবে সাংবাদিকতার নিয়ম কানুনের ধারণা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকম হতে পারে। অনেক দেশে সংবাদ মাধ্যম সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় যা পুরোপুরি স্বাধীন নয়।আবার অনেক দেশে যে কোন মাধ্যম সরকার থেকে সম্পূর্ন স্বাধীন হলে ও সাংবাদিকরা ঐ দেশের সাংবিধানিক নিরাপত্তার আওতায় থাকে। স্বাধীন ও প্রতিযোগিতামূলক সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংগ্রহ করা মুক্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত সংবাদ নির্ভয়ে পরিবেশন সমাজকে, মানুষকে প্রকৃত আলোয় আলোকিত করে।
সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে কলাম লেখন সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। সাংবাদিকতার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন- ব্রডকাস্ট সাংবাদিক, দুরদর্শন,বেতার সহ অন্যান্য।আবার ফটোসাংবাদিক যারা তারাই আবার অনেকের মতে আলোকচিত্র শিল্পী বা যারা ছবি তুলেন। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকরা স্বাধীন ভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করেন।ক্রীড়া সাংবাদিক
খেলাধুলা সংক্রান্ত বিষয়ে লেখেন।অন্যদিকে অপরাধ সাংবাদিকরা অপরাধবিষয়ক লেখা লেখেন।যারা কলামিস্ট তারা ও সাংবাদিক-সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রবন্ধ লেখেন।আর এক ধরনের নাগরিক সাংবাদিক রয়েছে যারা নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে নাগরিক সমস্যা নিয়ে লিখে থাকেন।এরপর বিনোদন সাংবাদিক-বিনোধনধর্মী বিষয়-যেমন তারকা -দের জীবন, স্ক্যান্ডাল, রাশিফল এসব নিয়ে লিখে থাকেন। এই ছাড়া ও যারা ব্যাকপ্যাক সাংবাদিক তারা
নিজেই রিপোর্টার,নিজে ভিডিওগ্রাফার, আলোকচিত্রী এবং প্রযোজক। ভাল সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজন মুলত সময়,মনোযোগ এবং পরিশ্রম। এর পাশাপাশি কৌতূহল এবং জানার আগ্রহ। সাংবাদিকতার মানেই হচ্ছে মানুষকে নতুন কিছু বলা। মৌলিক সাংবাদিকতার জন্য নৈপুণ্য দরকার। সকল সাংবাদিক চায় মৌলিক কাজগুলো করতে। এখানে দায়সারা গোছের কিছু করলে চলে না। এখানে কঠোর পরিশ্রম দরকার,শুধু কয়েকদিনের জন্য নয়।প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই ভাল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে। আবার সাংবাদিকের কাজ সংবাদ সংগ্রহ করা,সংবাদের সত্যতা যাচাই করা,সংবাদ সম্পাদনা করা,প্রয়োজনে মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া,বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করা ও প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করা।
যেহেতু সাধারণ মানুষের জীবনে গণমাধ্যমের সরাসরি প্রভাব রয়েছে, সেহেতু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা একজন সাংবাদিকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়া সংবেদনশীল খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা ও বাঞ্ছনীয়।
একজন সাংবাদিকের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয় প্রত্যেক সাংবাদিক কে গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়তে হবে, এমন কোন কথা নেই।তবে বাংলা,ইংরেজি সাহিত্য,অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও এ পেশায় বর্তমানে নিয়োজিত আছেন। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে আগে থেকেই যারা নির্বাচন করে রাখেন, তাদের জন্য সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়াই ভালো।তবে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রী না হলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া বা সাংবাদিকতা পেশা না আসা উত্তম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকতার উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান অজর্ন করতে হবে।
ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতে ভালো দখল থাকা জরুরী।
এই ছাড়া ও কোন কিছুর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহের মানসিকতা থাকতে হবে।একজন সাংবাদিকের যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষতা,উপস্থাপনার জ্ঞান লেখালেখির দক্ষতা বিভিন্ন ধরনের লেখালেখিতে অভ্যস্ত থাকা অতীব জরুরি এ পেশায়। এ ছাড়াও বিশ্লেষণী ক্ষমতা, কিছু ক্ষেত্রে শুধু তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর না করে লেখায় বা সংবাদের যৌক্তিক চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে হবে।কারিগরি কিছু জ্ঞান থাকা ভালো। যেমন, ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরের প্রাথমিক ব্যবহার শিখে রাখা উত্তম।এর বাইরে ফেসবুক, টুইটার, সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকলে কাজ করতে সাংবাদিকদের অনেক সহজ হয়।
মোট কথা আগে থেকে নিজের পছন্দের বিষয়ে সঠিকভাবে জানা উচিত। একজন সাংবাদিক হিসেবে কপিরাইট বিষয়ক আইনের জ্ঞান থাকা জরুরি। সর্বশেষ যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সৃজনশীলতা। তাই নিজেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল ও গনতান্ত্রিক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে যা একজন সাংবাদিকের ক্ষেত্রে অতীব জরুরী।
[লেখক- কবি,প্রাবন্ধিক ও গনমাধ্যমকর্মী]
Discussion about this post