বিয়ে প্রতিটি নর নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়।
বিয়ে করা সাধারণত সুন্নাত। কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বড় গুনাহ’ করার সম্ভাবনা দেখা দিলে তখন বিয়ে করা তার জন্য ফরজ হয়ে পড়ে।আর স্ত্রীর নানাবিধ হক আদায় করার যার যোগ্যতা নেই,তার বিবাহ করা নাজায়েজ। ক্ষেত্র বিশেষে বিবাহ করা ওয়াজিব,নফল ও মুস্তাহাব
ও হয়ে থাকে।
‘বিয়ে’ শব্দটি যদিও পারিবারিক। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সকলের জীবনেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,যখন সে একজন জীবনসঙ্গীর সাথে নতুন জীবনের পথে পা বাড়ায়।এটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্হাপিত হয় এবং একটি আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ে ওঠে। বিয়ে শুধু নারী-পুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক নয়, সুস্হ ও স্বাভাবিক সমাজ গঠনের মূল হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে।মহানবী (সাঃ) বলেন,“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না,তার কর্তব্য রোযা রাখা যা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।”
(বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪)।সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে ও উত্তম।
___পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেন -‘তিনি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রী)একে অন্যের সাথী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া প্রবিষ্ট করে দিয়েছেন।
—( সূরা রুম-২১)।আসলে বিয়ে হবে এমন জনের সাথে যেখানে দুজন দুজনকে পরস্পর ভালবাসবে,তাদের মধ্যে থাকবে দায়বদ্ধতা,নিশ্চয়তা সুখে,দুখে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত একে অপরকে সম্মান করবে,দুজন এক সাথে পথ চলবে।
কেননা আমরা জানি বিয়ের ইতিহাসটি অনেক প্রাচীন যার ফলে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নানারীতি-রেওয়াজ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে,এই রীতি-রেওয়াজের সঙ্গে প্রধানত মিশে থাকে প্রত্যেক জাতি,গোষ্টি ও তার নিজ ধর্ম,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।বিয়ে প্রাচীন প্রথা বা রেওয়াজ হলে ও যা মুলত নারী পুরুষকে একসঙ্গে থাকার,সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবার গঠনের একটি সামাজিক স্বীকৃতি দেয় – এটি মুল বাস্তবতা।
এই বাস্তব জীবনে অনেকের মত আমি ও শীতের রাতে উদোম গায়ে হেঁটেছি কত পথ,দেখেছি শীত,বসন্ত ও চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ।এই সমাজ ব্যবস্থায় যে কোন কার
ও বিয়ে যে কোন কালে বা সময়ে হতে পারে কারন বিয়ে মুলত একটি সামাজিক বন্ধন।
সে বন্ধনে সবার মত আমি ও একবার জড়িয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে। তখন খাঁ খাঁ রোদ ছিল না তা ছিল কনকনে শীতের রাত। তাই সে দিন আমার কবি আমার জন্য গেয়েছিলেন-
কাঁপন-ভরা হিমের বায়ুভরে/ঝরা ফুলের পাপড়ি তাদের ঢাকে-/লুটায় কেন মরা ঘাসের’পরে।
হল কি দিন সারা/ বিদায় নেবে তারা ?
অন্য কবিতায় বলেছিলেন-
থর থর কাঁপে আজ শীতের বাতাস/সেদিন আশার ছিল যে দীরঘ-শ্বাস-
আজ তাহা নিরাশা কেঁদে বলে,হায়-/ ওরো মুঢ়,যে চায় সে চিরতরে যায়!
যাহারে রাখিবি তুই অন্তরের তলে
সে যদি হারায় কভু সাগরের জলে/কে তাহারে ফিরে পায় ? নাই ওরে নাই,/ অকুলের কুলে তারে খুঁজিছ বৃথাই!
যে- ফুল ফুটেনি ওরে তোর উপবনে/ পুবালি হাওয়ার শ্বাসে বরষা-কাঁদনে-
যে ফুল ফুটিবেনা রে আজ শীত রাতে/ দু ফোঁটা শিশির আর অশ্রুজল পাতে।
অনেকের মতে,বিয়ের অপর নাম মধুময় বসন্ত। তাই কবি গেয়েছেন-
বসন্ত এলো এলো এলোরে/পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে/….… মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে ”- ।
যেমন ভ্রমর যে কোন সময় তার ইচ্ছে মত গুনগুন করতে পারে তেমনি এই সমাজ ব্যবস্থায় যে কারও বিয়ে যে কোন সময়ে বা কালে হতে পারে। গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত,শীত ও বসন্তে যে কারও বিয়ের সানাই বাজতে পারে। চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ্দুর-অসহনীয় গরম হলেও তবুও যে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান বা বিয়ের সানাইয়ের সুর সকলের ভাল লাগে যদি তা হয় পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায়।
গত ৩১মার্চ ২০২২ চট্টগ্রামের অভিজাত কপার সিমনি রেস্তোরায় মৃদ আলো আধাঁরে হৃদয় ভোলানো গানের মন মাতানো সুরে সুসম্পন্ন হলো ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির ও ডাঃ সাবিহা তারান্নুমের শুভ আকদ অনুষ্ঠান। এতে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কলম একাডেমি লন্ডনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাবিবী ও তাঁর সাথে কলমের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে বর কনের
স্ব স্ব পরিবারে সব ঘনিষ্ট সব আত্মীয় স্বজন ও শীতল পরিবেশে রাতের খাবার শেষে সবাই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন আর তৃপ্তিভরে শান্তির নিঃশ্বাস নেয় ও বর কনের জন্য সুন্দর,সুখ,শান্তি ময় আগামীর জীবন কামনা সবাই দোয়া করেন।
ওয়ার্ডসওয়ার্থ তাই যথার্থ বলেছেন,প্রকৃতি যেমন মানুষকে ধোঁকা দেয় না তেমনি প্রকৃত ভালবাসাও কখনও কোন মানুষকে ধোঁকা দেয় না।
…..যদিও এই সমাজ ব্যবস্থায় ভালবাসার নামে সর্বত্র চলছে মিথ্যাচার,রং ও ঢংয়ে হৃদয় নিয়ে চলছে মিথ্যে নৃত্য।
ভাঙাগড়ার খেলায় যে সমাজ নিজের স্বার্থে নিজের মত করে সব জলকাদা মিশিয়ে এক করে দেয় সেই সমাজে মনোরম পরিবেশে যদি কখনও কোন বর কনের হাত মেহেদি রাঙ্গা থাকে ও সেই সময়ে বিয়ের সানাইয়ের সুর প্রতিটি মানুষের মনকে প্রতিনিয়ত আনন্দে ভাসিয়ে দেয়।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের সমাজ কতটা সুখী,সুস্থ এবং তা নির্ধারণের উপায় হচ্ছে সমাজের কিছু কিছু সম্পর্ককে বিচার করা সেই ক্ষেত্রে বিয়ে অন্যতম।
আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি কীভাবে এই সম্পর্কগুলো সাজাচ্ছে সামাজিক সম্পর্কগুলোকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে,সম্পর্ক এর ক্ষেত্রে তার মূল্যবোধগুলোকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তার উপর নির্ভর করে আগামীর স্বপ্ন।তাই ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে আমি যখন কোন না কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করি বা কোন বিয়েতে অংশ গ্রহন করি তাতে ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় ও উপস্থিত মানুষের ভালবাসা তখন আমাকে আগামীর স্বপ্ন দেখায় কারন বর্তমানে বিয়ে বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানেই মুলত আত্মীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ হয় ও পারিবারিক সামাজিক জীবনের সুখ,দুঃখ ও বিভিন্ন বিষয়ে জানা যায়,সে অনুযায়ী যার যার কল্যানে পরামর্শ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়।
এক কথায় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা হয়।হাদীসে কুদসীতে এসেছে, যে তোমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। [ বুখারী -৫৫২৯] ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা খুবই জঘন্য অপরাধ। এর কঠিন পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় সতর্ক করা হয়েছে। কোরআনের একস্থানে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে ফাসাদ এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।[বুখারী, হাদীস নং- ৫৫৩৫]
যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, তার দাবি গুলো পূর্ণ করে তার জীবন হয়ে উঠে বরকতপূর্ণ,সমৃদ্ধ স্বচ্ছল এবং দীর্ঘায়ু লাভের উপযোগী।
হযরত আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন —–
যে ব্যক্তি স্বচ্ছলতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে ’।
🌿 [বুখারী, হাদীস নং- ৫৫২৭]
তাই কঠিন বাস্তবময় এই সমাজ ব্যবস্থায় সমাজকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিতে প্রত্যেক নর নারীর উপযুক্ত সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নর ও নারীর যৌথ প্রয়াসে সমাজকে আলোকিত করে সুন্দর পৃথিবী গঠনের কোন বিকল্প নেই।
লেখক-
মোঃ কামরুল ইসলাম।
কবি ও প্রাবন্ধিক।
Discussion about this post