ভ্রমন একটি আনন্দময় ইবাদত
মোঃ কামরুল ইসলামঃ
ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার একটি উৎস আর অন্যকে দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানান দেওয়া বা উৎসাহিত করাও ইবাদতের একটি অংশ যার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পূর্ববর্তীদের কীর্তি ও পরিণতি সম্বন্ধে জানা ও শিক্ষা গ্রহণ করা।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল তা কি তারা দেখে না?যারা মুত্তাকি তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়,তোমরা
কি বোঝো না?’
(সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ১০৯) ভ্রমন যার আরবি হলো সফর বা ছায়ের। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম হজ্ব বা ওমরাহ ও এক অর্থে ভ্রমণ।
তবে যে কোন ভ্রমন হতে হবে ভাল উদ্দেশ্যে।আল্লাহর সৃষ্টি এই জগৎ হচ্ছে কল্পনাতীত বিশাল।পূর্ব থেকে পশ্চিম,উত্তর থেকে দক্ষিণ,দিক-দিগান্ত জুড়ে কত দেশ, নগর,সভ্যতা ও কত রং বেরঙের মানুষ যা কল্পনা করা কঠিন।
আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজ,নিজ সংস্কৃতি, আচার আচারন, ইতিহাস, ঐতিহ্য । প্রত্যেক জাতি, ধর্ম, গোষ্টি সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। ভ্রমন আমাদের অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়।ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু শেখায় আমাদের জ্ঞানের দুয়ার খোলে দেয়। ভ্রমণ আমাদের মনকে উদার করে, চোখ খুলে দেয়। যারা জ্ঞানে, মননে ছোট পরিসরে থাকে ভ্রমন তাকে নিয়ে যায় বিশাল ময়দানে। ইসলামে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম।কোরআনে তেরো বারের বেশি ভ্রমণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, তারা
কি পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি, যার ফলে তারা উপলব্ধিকারী হৃদয় ও শ্রবণকারী কানের অধিকারী হতো?’ (সুরা হজ্ব : আয়াত : ৪৬)
কোরআনে অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী) তাদের বলো—পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করো এবং দেখো তিনি কিভাবে সৃষ্টির সূচনা করেছেন, তারপর আল্লাহ (এসবকে) আবার জীবন দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)
শুধু এতটুকুই নয়, যে কোন ভ্রমণকারীর যেন ইবাদত বন্দেগিতে কষ্ট না হয় এইজন্য ইসলামে ‘কসর’ বা চার রাকাআতের নামাজ দুই রাকাআত পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এবং রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে তাই ইসলাম বিশেষজ্ঞ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্রমণ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত।
আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ভ্রমণে সঙ্গীসাথীর সংখ্যা সম্পর্কে ও নির্দেশনা দেন। বলেন, ‘একজন কিংবা দুইজন সঙ্গীর চেয়ে তিনজন সঙ্গী অধিক উত্তম। তিনজনের ভ্রমণকে কাফেলা বলা হয়। একজন কিংবা দুইজনের ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তিনজনের ওপর শযতানের প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয় না।’ (তিরমিজি : হাদিস : ১৫৯৮)।
তিনি তিনজনের সফরে একজনকে দলনেতা নির্বাচন করতে বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, যখন একসঙ্গে তিনজন ভ্রমণে বের হবে, তখন একজনকে নেতা নিযুক্ত করবে।’ (আবু দাউদ : হাদিস : ২২৪১)
এইবার নরসিংদী ভ্রমনে আমাদের দলনেতা ছিলেন মিসেস ইসরাত জাহান আর সাথে ছিলেন মিস সেলিনা। আমার মতে কর্মব্যস্ত জীবনে ভ্রমন কাজের উৎসাহকে বাড়িয়ে দেয় কেননা ভ্রমণের কারণে মানুষ ধৈর্যশীল হয়, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। যার ফলে সময় পেলে আমি কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই এইবার ভ্রমন ছিল ঢাকার অদুরে নরসিংদী এই ছাড়াও ভ্রমনে গেলে দেশে বা বিদেশে বা কখন ও কোন দর্শনীয় স্থান দেখতে গিয়ে ছবি তুলতেই হবে এমন নয় বা ছবি তোলা আমার মুলত কোন শখ নয়। অন্য কোন প্রিয়জন যখন ছবি তুলে বা আমাকে পাঠায় তখন ঐ ছবি গুলো দেখে কিছু স্মৃতি আমার মনে পড়ে বা ঐ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে বা কিছু জানা, অজানা তথ্য পাঠকের নিকট তুলে ধরতে মন দরখাস্ত করে তখন কিছু লেখার চেষ্টা করি তাহা ছাড়া মুলত অন্য কিছু নয়।
বর্তমানে যে মাধ্যমে আমরা লিখছি সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনকে খানিকটা সহজ আনন্দময় করলে ও তা আমাদের মেধা, সৃজনশীল চিন্তা চেতনাকে অনেকাংশে সংকোচিত করছে।এইমাধ্যম মানুষকে অজনা তথ্য সহজে জানিয়ে দেবে বা মানুষের কল্যানে কাজ করবে তা না করে সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
সেই যাই হোক বর্তমানে কোন লেখক সমাজের অবক্ষয় রোধে, সমাজ উন্নয়নে যখন জ্ঞানগর্ব, শিক্ষনীয় কোন কিছু লিখে তখন তা আমরা কেউ তা ছুঁয়ে ও দেখি না আর লেখার আকার যদি খানিকটা বড় হয় দু একজন ছাড়া বাকিরা পড়তে বিরক্ত বোধ করি।
যদিও তা পাঠে জীবন সম্পর্কে বা অজানা তথ্য জানা যায় তবে তা আমরা এখন সবাই অবলীলায় অবজ্ঞা করি।যার ফলে এই মাধ্যমের প্রতি দিন দিন বিজ্ঞজনের অনিহা বাড়ছে।
জানা গেছে, প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যে লালিত ঢাকার নিকটবর্তী একটি জেলা যার নাম নরসিংদী। সাগর কলার জন্য এই জেলা বিখ্যাত।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ঢাকার বাইরে প্রথম হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে এই জেলার পাঁচদোনা নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ করে। মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রাপ্ত ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান, পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক গিরিশ চন্দ্র সেন এই জেলার সন্তান। ১৯৮৪ সালে এটিকে পরিপূর্ণ জেলা ঘোষনা করা হয়।
প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি নরসিংহ নামক এক রাজার শাসনাধীন ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেন।
তারই নামানুসারে ‘নরসিংদী’ নামের আবির্ভাব হয়। রাজা নরসিংহের নামের সঙ্গে ‘দী’ যুক্ত হয়ে ‘নরসিংহদী’ হয়। ওই শব্দের পরিবর্তিত রূপই আজকের ‘নরসিংদী’ এই জেলাটি।
ঢাকা থেকে মাত্র ৫৭ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর তীরবর্তী জেলা শহর নরসিংদী। নরসিংদী জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের বিপুল সমাহার যেমন -উয়ারী-বটেশ্বর, শাহ ইরানি মাজার ও ড্রিম হলিডে পার্ক সহ নানা প্রত্নতাত্বিক ও আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র অন্যতম। এই ছাড়াও রয়েছে বালাপুর জমিদার বাড়ি, গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটা, আশ্রাবপুর মসজিদ, জমিদার লক্ষণ সাহার বাড়ি অন্যতম।
নরসিংদী জেলার অতি নিকটে পাঁচদোনার চৈতাবাতে ড্রিম হলিডে পার্কে আমার মত যে কেউ সহ স্বপরিবারে আসতে পারেন। প্রায় ৬০ একর জমির ওপর এই পার্কটি নির্মিত। এর সৌন্দর্য্য না দেখলে লিখে বর্ননা করা যাবে না। দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলেও রাত্রে এখানে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অনেক হরিণ রয়েছে তাহাছাড়া রাজহাঁস, পাতিহাঁস ও লেকে তাদের বিচরন যে কাউকে আনন্দ দিবে।তা ছাড়া ভুতের বাড়ি গিয়ে আমার মত আলোচনা সাপেক্ষে চা খেয়ে আসতে পারেন আর আমার মত মাঝি বিহীন নৌকায় দাড়িয়ে মনের আনন্দে একটি গান ও গাইতে পারেন-
🌿 মাঝি নাও ছাইরা দে,ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে
গা-রে মাঝি গা কোন গান।
একদিন তোর নাও মাঝি,ভাসবে না রে নরসিংদীর মনোরম হ্রদে,
সেদিন তোর গান মাঝি, শুনবে না কেউ গাইবে না বলে-
লেখক- কবি,প্রাবন্ধিক ও গনমাধ্যমকর্মী।
Discussion about this post