মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী: কলম হচ্ছে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন প্রদত্ত একটি বড় নিয়ামত।
যাঁরা কলমকে সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারা দুনিয়াতে হাজার বছর বেঁচে থাকেন।
কলম না থাকলে পৃথিবীতে কোন কিছুই প্রতিষ্ঠিত হতো না। দুনিয়ার কায়- কারবারও সঠিকভাবে পরিচালিত হতো না।
দয়াময় প্রভু মানবজাতিকে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে বৈচিত্র্যময় করে সৃষ্টি করে তাদের হাতে কলম উঠিয়ে দিয়েছেন।
আর এ কলমের সাহায্যেই তারা শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রগতি, বিজ্ঞান, শিল্প-কলা, তথ্য-প্রযুক্তি লিখে দিন দিন
আধুনিকতার চরম উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে। কলমকে বলা হয় হৃদয়ের জিহবা, জড় জগতের সবচেয়ে
সম্মানী বস্তু। মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে ইহা অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। এর শক্তি অপরিসীম। ইহা এক প্রচন্ড
দ্রোহ, শাণিত কৃপাণ, অসত্যের বিরুদ্ধে এক বজ্রকঠিন হাতিয়ার। টেইলর বলেছেন, ‘কলম হলো যন্ত্রপাতির মধ্যে
সবচেয়ে ভয়ানক। ইহা তরবারীর চেয়েও ধারালো, চাবুক বা লোহার ডান্ডার চেয়েও ভয়াবহ। ইংরেজিতে বলা হয়,
‘Pen is mighter than the sword’.
কলমের একটি মাত্রই কাজ, আর তা হলো লেখা। চার্লস গ্রভিল বলেছেন, ‘একটি কলমের সাহায্যে যেভাবে
হৃদয়ের কথা উৎসারিত হয়, তেমনি আর কিছুতেই হয় না। যিনি কলমের সাহায্যে সমাজের যাবতীয় অন্যায়,
অত্যাচার-অবিচার, জুলুম-অনাচার ও নির্যাতন- নিপীড়ন দূর করতে চান তাকে হতে হয় সত্যের পক্ষে অকুতোভয় সৈনিক।
তাকে মোকাবিলা করতে হয় নিদারুণ দুঃখ-মুসিবত, চলতে হয় নিঃসীম অন্ধকার পথে-ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের
উপর দিয়ে, পার হতে হয় কাঁটাবনের ঠিক মাঝখান দিয়ে, বন্ধু করে নিতে হয় ক্ষুধা-দারিদ্র্য আর অভাব-অনটনকে।
পৃথিবীর বড় কলম সৈনিকদের জীবনেতিহাস পাঠ করলে আমাদের সামনে উপরোক্ত চিত্রগুলোই ফুটে উঠে।
আল্লামা ইকবাল, জর্জ বানার্ড ‘শ, কাজী নজরুল ইসলাম, ইমাম গায্যালী, ইবনে তাইমিয়া, আল ফারাবী, শেখ সা’দী
প্রমুখের সংগ্রামী জীবন এবং তাদের ক্ষুরধার লেখনীই বিশ্ব সভ্যতাকে অজ্ঞতার তিমির অন্ধকার থেকে টেনে তুলে
আলোর সোনালী দিগন্তে নিয়ে আসে।
“দেশ হতে দেশ দেশেন্তারে, নজরুল হাবিবি স্যার ছুটছে কেমন করে, এক দেশ হতে অন্য দেশান্তরে,
দিন রাত পরিশ্রম করে, গড়ে তুললেন কলম সাহিত্যিক সংগঠনে, যে সংগঠনের মূল তিম হলো কলম,
সেই কলম আজ ছড়িয়ে পড়ল, সারা বিশ্ব জাহান জুড়ে”।
এর ধারা-বাহিকতায় “কলম একাডেমি লন্ডন’ এবং এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাহিত্যের বাতিঘর খ্যাত প্রফেসর নজরুল
ইসলাম হাবিবী’র অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এবং ত্যাগের বিনিময়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্বের অবহেলিত লেখক,
কবি, সাহিত্যপ্রেমিকদের আহবান করেন এবং লেখকদের অধিকার আদায়ে অগ্রগতি কাজ করে যান । বিভিন্ন দেশে
গড়ে তুলেন গ্রাম গঞ্জে এ্যান্ড বিভিন্ন দেশে “কলম একাডেমির ” লেখক লেখিকার সংগঠন । এ সংগঠন বৃটেন
এবং বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রার্ড চ্যারিটিবল সংস্থা (দুই জাহানের সংগঠন) ‘সারাহ-হাবিব লন্ডন’ এর অন্বিত সংগঠন।
লক্ষ লক্ষ লেখকের মনের আবেদন ‘লেখক মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা ও ১৮ সেপ্টেম্বরকে “বিশ্বলেখক অধিকার”
দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক ।
এই প্রাণ প্রিয় লেখক লেখিকার সংগঠন ”কলম একাডেমির লন্ডন” ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে, ভারত ও বর্হিবিশ্বের
প্রতিটি শাখায় সাহিত্য সভা- সেমিনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
যে কলম দেশাত্মবোধ, মানবতা, উদারতা, মহানুভবতা প্রতিভার বিকাশ সাধন করে মানুষের সঠিক পরিচয় তুলে ধরে প্রভুর
সাথে যথাযথ সম্পর্ক তৈরি করে দিতে পারে না, সে কলম ধারালো কলম নয়, সে কলম ভোঁতা কলম, অকেজো কলম।
আর সম্ভবত এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় কলম সম্পর্কেই ছড়াকার লিখেছেন-
দাদার হাতে কলম ছিল -ছুঁড়ে মেরেছে, উহ্ বড্ড লেগেছে। যে কলম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করে তামাম দুনিয়ার মানুষকে
শান্তির সামিয়ানায় এনে দাঁড় করায়। যে কলম নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, সর্বহারা,
দিশেহারা ও হতাশাগ্রস্তদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে, সে কলমই নৈতিক কলম, কল্যাণকামী কলম, সংগ্রামী
কলম। আর এ কলমই সমাজের বিনির্মাণের শাণিত হাতিয়ার, এমন এক সম্মোহনী শক্তি যার শক্তি হাজারো তরবারী
থেকেও ধারালো। কলমকে যদি প্রকৃতির ভাষা হিসেবে নিরূপণ করা যায় তাহলে ইহার সাহায্যে প্রকৃত শৈল্পিক সৌন্দর্য
ফুটে উঠবে। রুশো বলেন,
Everything is good as itleaves the hands of the author of nature; everythings denigrates in the hand of man.
মনীষীরা বলেছেন, ‘বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র’। তাই কলমকে বানাতে হবে সত্যের প্রতিষ্ঠা
আর মিথ্যা বিতাড়নের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে।
জয় হউক কলমের। জয় হউক লেখকের এবং জয় হউক মানবতার।
লেখক,
মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী
সদস্য
কলম একাডেমি লন্ডন- ইউ.এ.ই. চ্যাপ্টার।
Discussion about this post