একাডেমী-একাডেমি যুদ্ধ,জনতা ক্ষুব্ধ!
ইউনাইটেড কিংডম এবং বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রার্ড “দুই দুনিয়ার সংগঠন” ‘সারাহ-হাবিব ট্রাস্ট লন্ডন’- এর সহযোগী সংস্থা, “অক্ষরে অমরতা” শ্লোগানের পতাকাবাহী, আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ এর একজন একনিষ্ঠ পাঠক/সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে মত প্রকাশ করতে যাচ্ছি।
মত প্রকাশের বিষয়বস্তু ‘একাডেমী/একাডেমি’ শব্দ/ নামের ব্যবহার। যেমন,’কলম একাডেমী লন্ডন’ এটি একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। যাঁর স্বত্বাধিকারী ‘সাহিত্যের বাতিঘর’ নামে খ্যাত জনাব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাবিবী।
নাম হচ্ছে পরিচয় ও নিদর্শন।’একটি সুন্দর নাম অনেক ধন-সম্পদের চেয়েও উত্তম।’ সবাই উত্তম শব্দের সাথে পরিচিত আছি,’উত্তম নগর’,পশ্চিম দিল্লির একটি আবাসিক এলাকা,সেখানে ‘উত্তম নামে’ অনেক মানুষ খুঁজে পাবেন। আমাদের আশেপাশে অনেক ভাই বন্ধুর নামও উত্তম। যেমন,উত্তম কুমার, উত্তম নাথ,উত্তম শীল ইত্যাদি।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়,’কলম একাডেমী লন্ডন’ এর একজন সম্মানিত উপদেষ্টার নাম জনাব অধ্যাপক ‘জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়া’। আপনজনদের মধ্যে কেউ যদি মায়া করে তাঁর নামটি সংক্ষেপে ‘লাল বড়ুয়া’ বলে সম্বোধন করে তাহলে আপত্তি কিসের?কিন্ত পত্রিকার পাতায় সংক্ষিপ্ত করে লাল বড়ুয়া নামটি যদি লাল করেও ছাপানো হয়,তাহলে তিনি যে একজন অধ্যাপক এবং শ্রদ্ধার পাত্র সেটি কিভাবে পাঠক-পাঠীকারা বুঝবেন? তিনিই’বা কেন ব্যাপারটি মেনে নিবেন?
লেখার/প্রকাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই অধ্যাপক জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়া নামটি সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ করে উল্লেখ করতে হবে;তা নয় কি?
এবার আসুন, একাডেমি/একাডেমী বানান সম্পর্কে কিছু ধারণা নিয়ে যাক। যদিও পূর্বে এ বিষয়ে অনেকেই অনেকভাবে মন্তব্য করেছেন,কিন্তু আমরা এখনও একটি মত বা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয় নি।
বিষয়টি ব্যাকরণগত দিক এবং নিতান্ত কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নামের ব্যবহারে ভিন্ন ভিন্ন রূপ পাচ্ছে।
বর্তমান বাংলা একাডেমির বানানরীতি আমাদেরকে ‘ঠেলা’ থেকে ‘ঠ্যালতে -ঠ্যালতে (ঠেলাগাড়ি > ঠ্যালাগাড়ি) মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে তুলে এনেছেন;(শ্রেণী > শ্রেণি)।
#প্রমিত_বানান_রীতি_অনুযায়ী বিদেশি শব্দে কেবল ই এবং এদের কারচিহ্ন ই-কার (ি) ব্যবহৃত হবে।
যেমন,ঈদ>ইদ,একাডেমী>একাডেমি,পরি>পরি, নবী>নবি ইত্যাদি।
কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে,-আমি জামা ‘পরি’, আমরা বই ‘পড়ি’, মেয়েটি ‘পরী’র মতো সুন্দর!
‘মেয়েটি পরীর মতো সুন্দর’ বাক্যটিতে ‘পরী’ বিদেশি শব্দ হওয়ায় যদি ই-কার( ি) ব্যবহার করে থাকি এরূপ হবে;যেমন, মেয়েটি পরির মতো সুন্দর। তাহলে জামা পরি’ আর হুর-পরি পার্থক্য বুঝতে বাক্যের ধরন বুঝতে হবে। ‘পরি’ যেহেতু বিদেশি (ফারসি) শব্দ সেহেতু কারচিহ্ন ই-কার হবে। ‘পরি’ শব্দের অন্য একটি বাক্যগঠন করি,
→পরি সুন্দর জামা পরে হেলেদুলে নাচে আর আমরা পড়ছি প্যাঁছে!
তবে আমার চোখে ‘পরির’ ই-কার চেয়ে ‘পরীর’ ঈ-কার শব্দ সুন্দর এবং মানানসই,হোক তা বিদেশি শব্দ।
এখানে আবার লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,
স্ত্রীবাচক_অ-তৎসম_শব্দের শেষে ‘ই-কার’ হয়। যেমন: ভাইঝি, ভাবি, মামি,বুড়ি, মুরগি ইত্যাদি।
স্ত্রীবাচক_তৎসম_শব্দের শেষে ‘ঈ-কার’ হয়।
যেমন: ছাত্রী, জননী, তরুণী, নারী, সুন্দরী ইত্যাদি।
আসুন, উপরোল্লিখিত ‘ভাবি’ শব্দের বাক্যগঠন দেখা যাক,
→আমি দেবর যা ভাবি,ভাবি তা ভাবে না!
→ভাবির ভাবাভাবির সময় নেই।
প্রবাদ আছে “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।” এখন ভাবী/ভাবি লিখতেও ভাবতে হচ্ছে।
বর্তমানে এসব হচ্ছে ‘বাংলা একাডেমি’ কর্তৃক শুদ্ধ বানান রীতি।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়েও ব্যাপক জটিলতা রয়েছে।
আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘একাডেমী’ শব্দটি তাহলে নিঃসন্দেহে ‘একাডেমি’ হচ্ছে?
উত্তরে বলবো, না। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান‘ মতে, সঠিক বানান ‘অ্যাকাডেমি’। তবে নাম হিসেবে ‘বাংলা একাডেমি।’ এ বিষয়ে একজনের মন্তব্য হুবহু তুলে ধরছি যাতে একটু পরিস্কারভাবে বুঝতে পারেন,_”ইংরেজি ভাষায় যেটি academy ফরাসি ভাষায় তা academie এবং লাতিন ভাষায় সেটিই academia। শব্দটিকে ইংরেজি অনুসরণে বাংলায় অ্যাকাডেমি, ফরাসি অনুসারে অকাদেমি এবং লাতিন অনুসরণে আকাদেমি লেখা হয়। পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা আকাদেমি’ লাতিন রীতি অনুসরণে এবং দিল্লির ‘সাহিত্য অকাদেমি’ ফরাসি রীতি অনুসরণে লিখিত। তবে বাংলাদেশের ‘বাংলা একাডেমি’ কোন ভাষা অনুসরণে লিখিত তা বানান দেখে বোঝা যায় না। বাংলাদেশে শব্দটি ইংরেজি academy অনুসরণে উচ্চারিত হলেও বানান করা হচ্ছে ‘একাডেমি’। একাডেমি’ সম্ভবত ইংরেজি academy হতে গৃহীত বাংলা-অনুসারী একটি নাম। অনেকে এই নাম পরিবর্তন করে ‘অ্যাকাডেমি’ রাখা উচিত বলে মনে করেন। তবে নামের যেহেতু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই পরিবর্তন না করলেও অসুবিধা নেই। বাংলা একাডেমি’র একাডেমি নাম হিসেবে একাডেমি লেখা হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে শব্দটির প্রমিত বানান অ্যাকাডেমি। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে তাই বলা হয়েছে। কিন্তু বহুল পরিচিত বাংলা একাডেমি নামের প্রতিষ্ঠানটি অভিধানের প্রমিত অ্যাকাডেমি শব্দকে মুছে দিয়েছে। সবাই মনে করেন, শব্দ হিসেবেও ‘একাডেমি’ লিখতে হবে। আসলে তা ঠিক নয়।”
‘কলম একাডেমী লন্ডন’, হুবহু যদিও এ নামে লোগোটি কেন্দ্রীয় কমিটি হতে নির্ধারিত তবুও আমাদের মধ্যে অনেকেরই একাডেমী/ একাডেমি শব্দে দ্বিধাদ্বন্দ রয়েছে। এটির একটি সমাধানের পথ খুঁজতে আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আমার অভিমত হচ্ছে, ‘Academy’ শব্দের বাংলা অনুসরণ একেকজন একেকভাবে করছেন এবং যে যেভাবে পারছেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছেন। যেমন, ‘বাংলা একাডেমী’> ‘বাংলা একাডেমি’,তাঁরা প্লাস্টিক সার্জারি রূপে একাডেমী নামের চেহারা পাল্টিয়েছে।
কারণ ‘Academy’ শব্দটি অবশ্যই বিদেশি শব্দ,
তাদের যুক্তি,’ঈদ’ বিদেশি শব্দ হওয়ায় যেভাবে ‘ইদ’ করা হয়েছে তদ্রূপ পূর্বের একাডেমী বানানে (ী) এর জায়গায় (ি) ব্যবহারে একাডেমি হয়েছে মাত্র। সুতরাং ‘বাংলা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠানটি ‘একাডেমি’ নামের স্বত্বাধিকারী। একই নামে অনেক নাম থাকতে পারে,লেখার ক্ষেত্রে একেকজন একেকভাবে লিখতে পারে,যেমন ‘শিল্পকলা একাডেমী’, ‘শিশু একাডেমী’,’কলম একাডেমী লন্ডন’ ইত্যাদি। আমি বলব একাডেমী শব্দটিই আসলে একটি ডামি,যে নিরবে বিভিন্নভাবে অত্যাচার সহ্য করে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আরেকটু খেয়াল করুন,আমার ডাক নাম ‘শাহেদ’,অনেকেই আমার নাম লিখেন ‘সাহেদ’। কিন্তু আমার সব সনদপত্রে উল্লিখিত নাম শাহেদ।আমার শাহেদ নামটি প্রতিষ্ঠিত নাম।একইভাবে ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম।আপনি একাডেমী শব্দটি একাডেমি লিখেন তবে ভুল আপনার কারণ প্রতিষ্ঠানের নামই হচ্ছে ‘কলম একাডেমী লন্ডন’। লোগোটি তার প্রমাণ বহন করে এবং আমিও লোগোটির পক্ষে।
মূলকথা হচ্ছে, ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ নামে মাত্র কোন সাহিত্য সংগঠন নয় এটি বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। উক্ত প্রতিষ্ঠানের লোগো এবং ব্যানারে নাম ব্যবহারে আমাদের সজাগ এবং সতর্ক হতে হবে।কেন্দ্রীয় কমিটি যে শব্দে এবং ডিজাইনে লোগো,ব্যানার নির্দিষ্ট করেছেন সেটাতেই আমাদের ঐক্যমত থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে কাউকে হাসিঠাট্টার পাত্র হতে না হয়।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে টেকনোলজির ব্যবহার সর্বত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।। কিছুদিন পরে হয়তো ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ সদস্যাদেরকে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে হুবহু স্মার্টকার্ড ব্যবহার করতে হতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটি হঠাৎ করে ঐ উদ্যোগ গ্রহণ করলে আপনি পড়বেন ঝামেলায়, কারণ কার্ডটি বাংলায় ‘একাডেমী’ শব্দের জায়গায় যদি ‘একাডেমি’ থাকে তাহলে আপনি ভুয়া সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবেন,যদিও আপনি ভুয়া নন।
কিন্তু মেশিন আপনাকে চিনবে না।আজকাল সঠিক নামের ব্যবহার তাই সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আজকেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে,প্রতিষ্ঠানের নাম ইরেজিতে যাইহোক না কেন,বাংলা তার অর্থ বিবেচনা না করে মূলত বাংলায় প্রতিষ্ঠানটি কি নামে রেজিস্ট্রার করা সেটির সঠিক ও শুদ্ধ করে এর ব্যবহার করতে শেখা।
এককথায় আবারও বলতে হয়,সংগঠনের নামের ক্ষেত্রে সদস্যদেরকে ঐক্যমত থাকতে হবে লোগো এবং ব্যানারে ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ একাডেমী’ শব্দ ব্যবহারে।
যদিও এ মুহূর্তে একাডেমি/একাডেমী এর ব্যাপারে দাঙ্গাহাঙ্গামা হওয়ার কোন আশংকা নেই,এরপরও আমাদের মনে রাখতে হবে,যে কোন প্রতিষ্ঠানের তাদের নিজস্বতা রয়েছে।আমার জানা মতে কেন্দ্রীয় ঘোষণা মোতাবেক শুদ্ধ এবং স্বাক্ষরিত বাংলায় নাম ‘কলম একাডেমী লন্ডন’। সংগঠনের নাম বিবেচনা করে আমাদের ‘একাডেমী’ শব্দের ব্যবহার করা প্রয়োজন মনে করছি।
পরিশেষে বলতে চাই, নির্বাচন আর নির্বাসন শব্দদ্বয় দেখতে শুনতে প্রায় একই। বাক্যের ব্যবহারিক পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে।না হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিকে নির্বাসনে পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।আন্তরিক ধন্যবাদ।
উপরোল্লিখিত লেখায় আমার ভুল থাকতে পারে,আমার সমর্থনেও আপনাদের আপত্তি থাকতে পারে।তাই ভুল চোখে পড়লে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আপত্তি থাকলে সেটাও মন্তব্যে জানাবেন।আপনাদের মঙ্গল কামনা করি। বিশ্বব্যাপী সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং মানবতার কাজে ‘কলম একাডেমী লন্ডন’ জয়যাত্রায় এগিয়ে চলছে ও চলবে সে প্রত্যাশা করি।।
মোফাচ্ছেল হক শাহেদ
সাধারণ সম্পাদক,
‘কলম একাডেমী লন্ডন’ সংযুক্ত আবর আমিরাত চ্যাপ্টার এবং সদস্য,কলম মডারেটরস্ তদারক উপ-কমিটি।
Discussion about this post